top of page

আমি আমার অসুস্থতার সময়কালটিকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করছি লেখার সুবিধার্থে।
প্রাক ক্যান্সার :
   আমি ব্লাড ক্যান্সারের রোগী হিসেবে চিহ্নিত হবার মোটামুটি দুই মাস আগে থেকেই ছোট বড় নানা ধরনের অসুস্থতার সন্মুখীন হয়েছি। এই সমস্যাগুলো ক্যান্সারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত কিনা বলতে পারব না, কিন্তু জানানোটা জরুরী মনে হলো। ২০১৩র কথা বলছি, সময়টা  জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি, শুরু হল কোমরে ব্যথা, সাধারণ ব্যথা, নম্বই শতাংশ মহিলাদের যেমন হয়, সেরকমই। হাড়ের ডাক্তারের (Orthopedist) পরামর্শে ভিটামিন ডি এবং ব্যথার ওষুধের (Painkiller) সাহায্যে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলাম। পাখি  দেখাটা আমার নেশা। চেন্নাইতে শীত পড়ে না ঠিকই, কিন্তু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারী মাসে প্রচুর পাখি আসে। সেই বছরও অভ্যাস বসত বেরিয়ে পড়ি। আমাদের বাড়ি থেকে পুলিকটের দূরত্ব একশো কিলোমিটার, যাতায়াত মিলে দুশো। জানুয়ারীর ২৮, গিয়েছিলাম পাখি দেখতে। পাখি দেখা, ছবি তোলা, এগুলো আমাকে ভীষণ আনন্দ দেয়। ফিরেই ক্যামেরা নিয়ে বসতে ইচ্ছে করে, কিন্তু সেদিন আমায় দাঁড়ি টানতে হয়েছিল। বুকে, পিঠে, মাথার  যন্ত্রনা বেশ কাবু করেছিল। চলেছিল প্রায় চার -পাচঁ দিন। লোকাল ডাক্তারের পেইনকিলারেই এই পর্বের সমাপ্তি। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ, লোভে পড়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম পাখি দেখতে। এবার ভেদানথাঙ্গাল। বাড়ি থেকে আশি কিলোমিটার। শরীর সেইবার একটু বেশিই জানান দিচ্ছিল। ক্লান্তিবোধের পারাটা আমার উৎসাহের মতোই উর্দ্ধমুখী। 

তারপরই গভীর নির্বাসন......
এই হাসপাতাল, ঐ হাসপাতাল মিলে প্রায় পাঁচ মাসের ধাক্কা। 


বলছি, তারপর কি হল।

 

    ফেরার দুদিন পরে হঠাৎ দাঁতের যন্ত্রনা, প্রচন্ড যন্ত্রনা। সঙ্গে পিঠে ব্যথাটাও অসম্ভব বেড়ে গেল। পরের দিন সকালেই হাসপাতালে গেলাম। একটা ছোটো মিশনারী হাসপাতাল। ছোটোখাটো সমস্যায় আমরা ওখানেই যেতাম। ডাক্তার বললেন ব্যথাটা দাঁতে নয়, মাড়িতে। মাড়িতে সিস্ট (cyst) আছে, সার্জারি করতে হবে। দুদিন বাদেই সার্জারিটা হয়ে গেল। অসাধারণ দুঃসাহসিক এক ডাক্তারের পাল্লায় পড়েছিলাম। ছোট্টো করে বলি.....
তিনি রুটিন টেস্ট ছাড়াই জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া (genaral anesthesia) করে সার্জারি করে ফেললেন। ফলে তখন আমার হিমোগ্লোবিন কত ছিল জানতে পারিনি। এখন বুঝি সার্জারিটার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, পরবর্তীকালে যখন আমার পেট স্ক্যান করা হয় তখন দেখি মাড়িতে ঐ ধরনের সিস্ট আরো আছে। দিন তিনেক পরে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে ছিলাম। সুস্থতার দিকে এগোচ্ছি না বুঝতে পারছিলাম। চূড়ান্ত ক্লান্তিবোধে, বিছানা থেকে উঠতে অক্ষম। দিন দুয়েক বাদে পিঠে ব্যথাটা অসহনীয় হয়ে উঠলো, সঙ্গে রাত ঘাম (Night Sweat) দিতে শুরু করলো। এই পিঠে ব্যথাটা চেনার জন্য আরো একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন। এটা কোনো সাধারণ পেইনকিলার খেয়ে কমে যাবার মতো ব্যথা নয়। দুর্বিষহ সেই তিনটি রাতের কথা আমি হয়তো কখনোই ভুলতে পারবো না। অসুস্থ হলে মানুষ শুয়ে বিশ্রাম নেয়। কিন্তু আমার সমস্যাটা হল আমি কোনো ভাবেই শুতে পারছিলাম না, সোজা হয়ে, পাশ ফিরে বা উপুড় হয়ে...  ইজি চেয়ারে বালিশ দিয়ে তিন তিনটে রাত বসে কাটাতে হয়েছিল আমাকে। এমতাবস্থায় দাদার পরামর্শে পরের দিন সকালেই আবার হাসপাতালে গেলাম, একই হাসপাতাল। একজনই মেডিসিনের ডাক্তার সেখানে। তাকেই দেখাতে গিয়েছিলাম, অবস্থা বুঝে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করে নিলেন। তারপর বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হল।

Contact me

Thanks for submitting!

Get Social

  • Facebook
  • Grey Twitter Icon
  • Grey LinkedIn Icon
  • Grey YouTube Icon
bottom of page