থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)
থ্যালাসেমিয়া, এই নামটা আজ অল্প বিস্তর অনেকেরই জানা। এটি একটি বংশগত রক্তের রোগ, যা পিতা-মাতা থেকে সন্তানের শরীরে আসে। এটা হয়তো অত্যুক্তি হবে না, আমাদের সচেতনতাই থ্যালাসেমিয়া মুক্ত ভারত তৈরী করতে পারে। কিছু উন্নত দেশ এরইমধ্যে এই কঠিন কাজটা করে ফেলেছে। সুতরাং এটা বলা যায়, কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়, আমরা পারবো!!!এবার কারণটার দিকে তাকাই,আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক একটি বস্তু থাকে যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে, যখন শরীরে এই হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়, তখনই এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।হিমোগ্লোবিন দুই ধরনের প্রোটিন চেন দিয়ে তৈরী। আলফা গ্লোবিন(Alpha Globin), এবং বিটা গ্লোবিন(Beta Globin)। আমাদের গন্ডগোলে জিন যখন সঠিক মাত্রায় আলফা গ্লোবিন তৈরী হতে দেয় না, তখন তাকে আলফা থ্যালাসেমিয়া বলে। আবার ঐ গন্ডগোলে জিন যখন বিটা গ্লোবিনকে সঠিক মাত্রায় তৈরী হতে বাধা দেয়, তখন বিটা থ্যালাসেমিয়া হয়। নাম যাই হোক না কেন, সমস্যাটা হলো শরীরের লোহিত রক্ত কণিকা পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন শরীরের বিভিন্ন অরগান এবং টিসুতে পৌঁছাতে পারে না। ফলে নানা ঊপসর্গ দেখা দেয়।
উপসর্গ এবং চিকিৎসা
অ্যানিমিয়ার লক্ষন গুলোই থ্যালাসেমিয়ার লক্ষন হিসাবে দেখা দেয়।
-
দুর্বল এবং ক্লান্তিবোধ
-
শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা
-
ফ্যাকাসে লাগা
এখানে বাচ্চাদের কথা একটু আলাদা করে বলা প্রয়োজন। বাচ্চার দুই বছর বয়সেই কিন্তু থ্যালাসেমিয়ার লক্ষন গুলি প্রকাশ পায়। এই তালিকায় আছে
-
চোখ এবং গায়ের চামড়ার রং হলুদ হয়ে যাওয়া
-
স্পিল্ন(Spleen) এবং লিভার(Liver) বড় হবার কারনে পেট অসম্ভব বড় দেখায়
-
মুখের হাড়ের পরিবর্তন ঘটে
-
প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়
-
বুদ্ধি এবং অন্যান্য ডেভলপমেন্টের সমস্যা হয়
থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা হািসাবে ব্লাড ট্রান্সফিউশন এবং চেলেশন থেরাপি দেওয়া হয়। তবে হালকা (mild) থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার চিকিৎসার প্রয়োজন পরে না। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনই তাদের এই সমস্যা থেকে অনেকাংশে মুক্তি দেয়। গুরুতর (severe) থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ব্লা়ড ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে হিমোগ্লোবিন ফেরৎ আনা হয়। এবং অ্যানেমিয়া জনিত সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু বার বার রক্ত দেবার ফলে রোগীর শরীরে অধিক মাত্রায় আয়রন জমে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে চেলেশন থেরাপির মাধ্যমে রোগীর শরীরে আয়রন জমতে দেওয়া হয় না। তবে চিরস্থায়ী সমাধান হিসাবে অস্থি মজ্জার প্রতিস্থাপনই একমাত্র উপায়।